যুবশ্রীর টাকা নয়, চাকরি চাই ” অল বেঙ্গল ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ” এর জনস্বার্থ মামলা

SATYAM NEWS

২০১১ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালে শ্রমদপ্তরের অধীনে বেকার কর্মপ্রার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য ‘ এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংক ‘ নামে একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়। বেকার কর্মপ্রার্থীগণ মূলত অনলাইনের মাধ্যমে এই এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংকে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন।২০১৩ সালের মার্চ মাসে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় তাতে বলা হয়, যে সকল প্রথম এক লক্ষ বেকার কর্মপ্রার্থী তাদের নাম নথিভুক্ত করেছেন তারা মাসে পনেরোশো টাকা করে উৎসাহ ভাতা পাবেন। সেইমতো ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর ইনডোর স্টেডিয়াম এ যুবশ্রী প্রকল্পের সূচনা করা হয়। প্রথম এক লক্ষ কর্মপ্রার্থীর কিছু সংখ্যকের হাতে পনেরোশো টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় এবং বাকিদের ব্যাংক একাউন্ট এ পনেরোশো টাকা করে ট্রান্সফার করা হয়। উক্ত মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং এক ঝাঁক মন্ত্রী ও আমলাগণ।মুখ্যমন্ত্রী উক্ত মঞ্চে ঘোষণা করেন যারা মাসে পনেরোশো টাকা করে উৎসাহ ভাতা পাচ্ছেন তাদেরকে এক বছরের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের নিরিখে নিয়োগ করা হবে। প্রথম এক লক্ষ কর্মপ্রার্থীদের নিয়োগ সম্পূর্ণ হলে পুনরায় আবার এক লক্ষ কর্মপ্রার্থীকে মাসে পনেরোশো টাকা করে ভাতা প্রদান এবং ধাপে ধাপে নিয়োগ করা হবে। কিন্তু দীর্ঘ সাত বছর অতিক্রম করার পর কোনো নিয়োগ না হওয়ায় যুবশ্রী কর্মকর্তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে ” অল বেঙ্গল ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ” নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলে। এই সংগঠনটি মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান কার্যালয় নবান্ন এবং শ্রম দপ্তরের অধীনে গঠিত এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বেন্টিং স্ট্রিটে ডেপুটেশন জমা দেয়।২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুর প্রশাসনিক বৈঠকে বর্তমান শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক যুবশ্রীর বেকার কর্মপ্রার্থীদের নিয়োগের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই নির্দেশ নির্দেশই থেকে গেছে আজ পর্যন্ত তা কার্যকর হয় নি। প্রত্যেকটি জেলার থেকে বিধায়ক, সাংসদ এবং রাজ্যের মন্ত্রী মহোদয়কে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছিল। এই স্বারকলিপির ওপর দৃষ্টিপাত করে তারা মুখ্যমন্ত্রী কে উক্ত বিষয়ে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো মুখ্যমন্ত্রী চাকরি দেবার নির্দেশ দেবার পরও কেন তা কার্যকর হলো না বা কেনইবা তাকে নতুন করে তাকে অনুরোধ জানাতে হবে চাকরি দেবার জন্য তা একেবারেই পরিষ্কার নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই সগঠন টি এক দরজা থেকে আর এক দরজায় নিজেদের অধিকারের দাবি নিয়ে ছুটে বেরিয়েছে কিন্তু তাতে কোনো ফল হয় নি। তাই বাধ্য হয়েই তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। গত ৮ ই অক্টোবর ২০২১ এ কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবি সৌগত মিত্র নেতৃত্বে কলকাতার মহামান্য উচ্চ আদালতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এ একটি জনস্বার্থ মামলা করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যুবশ্রী প্রকল্পের যখন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় তখন বলা হয়েছিল কর্মপ্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ১৮ এবং সর্বোচ্চ ৪৫ হতে হবে। এছাড়াও প্রত্যেক ছয় মাস অন্তর অনেক্সর ৩ নামক নবিকরণ করতে হবে যাতে উৎসাহ ভাতা চালু থাকে। কিন্তু সমস্যা হলো এই নিয়মকানুনের বেড়াজালে পড়ে যারা ৭ বছর আগে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ৭ বছর পর তাদের অনেকেরই বয়স ৪৫ পেরিয়ে গেছে ফলে কর্মপ্রার্থী হিসাবে আগামীতে তাদের নাম বাদ চলে যাবে। গত ১২/১২/২০২০ তারিখে রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সাংসদ সৌগত রায় সমস্ত যুবশ্রী কর্মপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে একটি প্রেস কনফারেন্স ডেকে জানিয়েছিলেন যে প্রথম এক লক্ষ যুবশ্রী ভাতা প্রাপক কর্মপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু আসল সত্যতা হলো এই যে প্রথম এক লক্ষ যুবশ্রী কর্মপ্রার্থীদের কেউই কোনো দপ্তরে নিযুক্ত হন নি। তাই তারা বাধ্য হয়েই এই মামলাটি দায়ের করেছেন। সারা পশ্চিমবঙ্গের যুবশ্রী বেকার ভাই বোনেদের স্বার্থরক্ষার জন্য ” অল বেঙ্গল ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ” এর পক্ষ থেকে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক গৌরীশঙ্কর করণ, মৌটুসী নন্দ, আইনজীবী সালমা শা এর উপস্থিতিতে মামলাটির প্রথম শুনানি হয় গত ২২/১১/২০২১ তারিখে। মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৫ সে জানুয়ারি ২০২২ সালে। মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী সৌগত মিত্র যুবশ্রীদের এই লড়াইয়ে জয় নিশ্চিত এমনটাই আশা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *