একদিনেই ঘুরে আসুন তারাপীঠ , বিশেষ ভ্রমণকাহিনী

SATYAM NEWS

সৌভিক সাহা , কলকাতা : ১৩ শতাব্দীর হিন্দু মন্দির তারাপীঠ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার মহকুমা রামপুরহাটে অবস্থিত II তারাপীঠ মন্দির তন্ত্র সাধনার এক সিদ্ধ পিঠ আর এখানকার মহা শ্মশান ভারত প্রসিদ্ধ । দেবী তারার এই মন্দিরে ভক্তদের ঢল প্রতিদিন ভোর বেলা থেকেই চোখে পরে।

তারাপীঠ সাধক ব্যমাখেপার জন্যও প্রসিদ্ধ ,”পাগল সাধু” ও বলা হতো সাধক ব্যমাখেপা কে।সাধক ব্যমাখেপা তারা মায়ের মন্দিরে উপাসনা করতেন এবং শ্মশান ঘাটে একজন চিকিৎসক হিসাবে বসবাস করতেন । তিনি বিখ্যাত সাধক, কৈলাশপতির অধীনে যোগ এবং তান্ত্রিক কলা অনুশীলন করেছিলেন ও সাধক রূপে প্রসিদ্ধ হন। বাবা ব্যমাখেপা তার সারা জীবন তারা মায়ের পূজায় উৎসর্গ করেছিলেন। তার আশ্রমও দ্বারকা নদীর তীরে এবং তারা মন্দিরের একদম কাছে অবস্থিত।

তারাপীঠ, কালীঘাট এবং নবদ্বীপ বাঙ্গালী হিন্দুদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়।

হটাৎ ঠিক হলো তারাপীঠ যাবো , মায়ের দর্শন করে একদিনেই ফিরে আসবো এমনটা ভেবেই শনিবার একটু তাড়াতাড়ি কাজ কম্মো মিটিয়ে পৌঁছে গেলাম হাওড়া স্টেশন। ৩ বন্ধু একসাথে যাওয়ার প্ল্যান অনেকদিন করেও যেতে পারছিলাম না কারণ ট্রেন এ রিজেরভেশন পাচ্ছিলাম না। এবারে ৭ দিন আগে যাওয়ার ট্রেনের টিকেট কেটে ফেলেছিলাম হাওড়া রামপুরহাট স্পেশাল ট্রেনের।

ট্রেন ছাড়লো ঠিক ঘড়ির কাটায় তখন বিকেল ৪.৩৫ মিনিট। তিন বন্ধু তারা মায়ের নাম করে বসে পড়লাম যে যার নিজের সিটে। গরমটা খানিক লাগছিলো তখন তাই ২ – ৩ তে ঠান্ডা জলের বোতল নিয়ে নিলাম। বিকেল গড়াতেই রোদের তেজ কমলো আর বেশ সুন্দর মিষ্টি একটা হাওয়া খেতে খেতে ধান খেত , পুকুর , বিল , নদী দুপাশে ফেলে ছুটে চললো ট্রেন। কু- ঝিক- ঝিক আওয়াজ করতে করতে ছুটে চললো ট্রেন আর আমরা মাঝে একবার দুবার উঠে ট্রেন এর খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রাণ জোড়ানো চৈত্রের সন্ধ্যাকালীন হাওয়া উপভোগ করলাম। সেই দুপুরের খাওয়া কখন যে হজম হয়ে গেছে এর মধ্যে , হালকা হালকা খিদে খিদে পেতেই বন্ধুর বৌয়ের বানিয়ে দেওয়া পরোটা ও আলুর দমের কথা মনে পরে গেলো। যেমন কথা তেমন কাজ ঝাঁপিয়ে পড়লাম সবাই খাবারের ওপর। ট্রেন তখন বোলপুর ঢুকে গেছে আর মাত্র ঘন্টা খানেক। রাতের খাওয়াটাও এবার আর চিন্তা নেই বেশি রাতেও করলে অসুবিধে নেই সন্ধ্যা কালীন টিফিন ও রাতের ডিনার অনেকটাই তো হয়ে গেছে ততক্ষুনে। বাঙালির আবার খাবার পর একটু মিষ্টি লাগে তাই মিষ্টি না থাকায় অজ্ঞতা ট্রেনের হকারের থেকে কিনে নেওয়া হলো গরম গরম দিলখুশ বেশ তৃপ্তি করে খেয়ে এবার অপেক্ষা রামপুরহাট পৌঁছনোর

রাত ৯.৪০ মিনিটে ট্রেন এসে দাঁড়ালো রামপুরহাটে। নেমে সোজা হেটে চলে গেলাম অটো স্ট্যান্ডে। এক একটা অটোতে ১০ – ১২ জন প্যাসেঞ্জের না হলে কোনো মতেই ছাড়বে না অটো। দিনের বেলায় জন প্রতি ৩০ টাকা লাগলেও রাতে জন প্রতি ৫০ টাকার এক পয়সা কম নেবে না কোনো অটোয়ালা তাই চেপে পড়লাম রাত ১০.১৫ নাগাদ। রাস্তা বেশ ভালো , রামপুরহাট শহর ছাড়তেই অটো চললো দু ধারে খোলা জমি আর মসৃন রাস্তা ধরে। নারায়ণপুর , বলিয়া , রামরামপুর , জয়কৃষ্ণপুর এসব গ্রাম পেরিয়ে মিনিট ২৫ পর পৌঁছে গেলাম তারাপীঠ বাস স্ট্যান্ডের কাছে।

অটো থেকে নামতেই হোটেলের এজেন্টদের ডাকাডাকি শুরু। যদিও আমাদের হোটেল ওখানে আগে থেকেই বুক করা ছিল যেখানে আমার ভাই ও তার বন্ধু বিকেলেই এসে পৌঁছে গেছে তাই আর হোটেল খোঁজার ঝক্কি টা নিতে হয়নি। হোটেল এখানে ৩০০ থেকে শুরু হয়ে যায়। সরাসরি হোটেলে পৌঁছে গিয়ে রাত ১১ টার পর হালকা চান করে নিলাম। এবার গন্তব্য ছিল মন্দির ও শশান দর্শন কিন্তু পৌঁছে শুনলাম রাত ১০ টার পর এখন সব বন্ধ। কিছুদিন আগেই কিছু দুর্ঘটনা ঘটায় রাত ১০ টার পর শশান চত্বরে না যাওয়াই ভালো। তাই এবার মন্দিরের উল্টো দিকের রাস্তায় যে রাস্তা টা মুণ্ডমালিনী তলার দিকে যাচ্ছে ওখানে রাস্তার দুপাশে সারি সারি খাবারের দোকানে পৌঁছলাম মাংস নিয়ে , আবদার রান্না করে দিতে হবে। ৫ জনের জন্য ১ কিলো চিকেন পড়লো ২৪০ টাকা আর রান্নার রেট ফিক্সড ১৩০ টাকা প্রতি কিলো, সঙ্গে রুটি ৫ টাকা করে পিস্। ৩০ মিনিটের মধ্যে রান্না প্রস্তুত হয়ে গেলো আমরাও এরমধ্যে একবার মন্দিরের মূল গেটের সামনে থেকে ঘুরে চলে এলাম। এক ভিখারি মায়ের সাথে কিছু গল্প করে ফিরে এসে খাবার বগলদাবা করে জয় তারা বলে সোজা হোটেলে।

রবিবার সকালে মন্দির খুলতেই দর্শনের জন্য একবার চলে গেলাম ৬ টা নাগাদ। তারাপীঠের মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য উপোস করার প্রয়জন তেমন নেই তাই সকালে মায়ের দর্শন করে চলে গেলাম মুণ্ডমালিনিতোলাতে ওখানে এক বাউলের গান শুনে মায়ের দর্শন করে প্রায় ১০.৩০ নাগাদ ফুলের মালা , ডালা , পেরা প্রসাদ নিয়ে চলে গেলাম মন্দির চত্বরে। মন্দির কমিটি এখন টাকা নিয়ে ভি আই পি দর্শনের ব্যবস্থাও করেছে। আপনারা ভিড় এড়িয়ে একটু কম সময়ে পুজো দিতে চাইলে ৩০০ , ৫০০ বা ১০০০ টাকার লাইনে দাঁড়াতে পারেন। গর্বগৃহের ভিতরে আপনার দর্শন ও পুজোর জন্য আপনার সাধ্য মতো টাকা দিতে পারেন আপনার পান্ডাকে।

আমরা পুজো ও মায়ের দর্শন সেরে টুক টাক একটু কেনাকাটার পর সোজা চলে গেলাম দুপুরের খাবারের হোটেলে। মন্দির অঞ্চলে প্রচুর হোটেল রয়েছে যেখানে ৭০ – ৮০ টাকায় পেট ভরে আনলিমিটেড নিরামিষ খালি খেতে পারেন। খাওয়া সেরে আমরা সোজা চলে এলাম হোটেলে সেখানে ১২ টার চেক আউট টাইম পেরিয়ে তখন প্রায় ১.২২ হয়ে গেছে তাই হোটেলে ২০০ টাকা এক্সট্রা দিয়ে আমরা একটা অটো ভাড়া করলাম ২৫০ টাকায়। সোজা পৌঁছে গেলাম রামপুরহাট স্টেশন , ওখানে কিওস্ক থেকে জেনারেল টিকেট কেটে নিলাম মা তারা এক্সপ্রেসের। যেহেতু আমাদের ফেরার টিকেট ছিল না তাই কিঞ্চিৎ সমস্যার মধ্যে পড়লেও আমরা উঠে পড়লাম ট্রেনে। নিজেদের সিট্ না থাকলেও গল্প আড্ডা মারতে মারতে আমরা যখন পৌঁছলাম নৈহাটী স্টেশন তখন আমাদের কোম্প্র্যাটমেন্ট টা প্রায় খালি হয়ে গেলো। পা ছড়িয়ে ৪ ঘন্টার পর ট্রেন এ বসে বেশ আনন্দে জয় জয় তারা বলতে বলতে ফিরে এলাম শিয়ালদহ স্টেশনে।

ঝটিকা এরম সফর বেশ ভালোই লাগে যখন সার্থক হয়ে মায়ের দর্শন ও পূজা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *