ভালোমানুষি কি কাল হলো কে কে’র ? এই মৃত্যুর দায়ে কার ?

SATYAM NEWS

সম্পাদকীয় কলম – কলকাতা প্রাণের শহর , আবেগের শহর তো বটেই সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু মনুষত্ব ? দায়বদ্ধত্য ? ন্যূনতম সংবেদনশীলতা ? এসব কি হারিয়ে গেছে এই বাংলার যুবসমাজের ? প্রশাসনের ?

মৃত্যু সবসময়ই বেদনার। কিন্তু কৃষ্ণকুমার কুন্নাথের (কে কে) মতো বিশ্বমানের শিল্পীর নিয়তিতে এমন মৃত্যু একেবারেই কাম্য ছিল না । অনেক শিল্পীরা বাংলা-বোম্বে এসব নিয়ে তর্যায়ে নেমে পড়েন সাত-পাঁচ না ভেবে কিন্তু প্রফেশনালিস্ম শিখতে হলে মনেহয়ে বোম্বের থেকে শেখা উচিত। মৃত্যুবরণ করে নিয়ে সেই কথাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেলো আমাদের সকলের প্রিয় ৯০ এর দশকের হৃদয়ভেদী গায়ক ‘কে কে’ । সোশ্যাল মিডিয়া তে যে আর্টিস্ট প্রশ্ন তোলে কে এই ‘কে কে’ ? কেন তাকে নিয়ে এত উন্মাদনা শহর কলকাতার , তাকে মৃত্যু বরণ করেও প্রোগ্রাম করে নিজের জাতটা চিনিয়ে দিয়ে গেলেন ‘কে কে’ , যদিও সেই বিতর্কে গেলে আরো একটা অন্য কাহিনী হয়ে উঠবে। থাকে সে সব কথা

সোজা ভাষায় ফিরে আসি মূল প্রশ্নে। কে বা কারা দায়ী এই যুগান্তকারী শিল্পীর মৃত্যুর ? যে প্রেক্ষাগৃহ নজরুল মঞ্চের দর্শক ধরানোর ক্ষমতা ৩০০০ এর কাছাকাছি সেখানে ৭০০০-৮০০০ লোক ঢোকে কি করে ? বন্ধ প্রেক্ষাগৃহে শ্বাসরোধ করা পরিস্থিতিতে গেয়ে চললেন কে কে , এটাই তার অনুগামীদের প্রতি দায়বদ্ধতা , কিন্তু মনুষত্ব-তথ্য টাই এখানে বেমানান প্রমান করে গেলো ওই কলেজ পড়ুয়ারা যারা ভিড় জমিয়ে দমবন্ধ মৃত্যু বরণ করতে বাধ্য করলো সকলের প্রিয় গায়ক কে।

ভালোমানুষির বিভিন্ন নিদর্শন খুঁজলেই পাওয়া যায় কে কের জীবনে। মিশুকে , হাসি খুশি , অতি সাধারণ জীবনযাপন কিন্তু এই সবই যে তার জীবনে অমঙ্গল হয়ে আসবে মঙ্গলবার ৩১ সে মে সেটা কোনও জান-বেজান দারুওয়ালার ছকেও হয়তো ধরা পড়েনি কখনো।

– প্রশ্ন উঠছে উদ্যোক্তারা এমন অবাবস্থার দায়ভার কার ঘাড়ে চাপাবেন ?
– লোকাল থানা – লেক থানার ও সি কে এখনো কাটগড়ায় দাঁড় করানো হলোনা কেন ?
– সরকারি পারমিশন কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এমন অবাবস্থাপূর্ণ অনুষ্ঠান চললো কি করে ?
– নজরুল মঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত্ব হল ঘরে এমন দমবন্ধ পরিস্থিতি বরদাস্ত করলো কার অঙ্গুলি হিলনে ?
– ক্রাউড মানাজেমেন্টে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যার্থ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কর্তারা কোথায় ?
– যারা সেদিন ভিড় সামলাতে বার্থ হয়ে ফায়ার এক্সটুইনগিসের থেকে স্মোক ফায়ার করলো তারা কারা ?
– স্মোক ফায়ার ও দমবন্ধ পরিস্থিতে যে সব ছাত্র- যুব প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেছিলো প্রেক্ষাগৃহ প্রাঙ্গন থেকে তারা কোথায় ? কেমন আছেন তারা ?
– পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছিল তার মুখে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে তাই নিউ মার্কেট পুলিশ স্টেশনের প্রাথমিক রিপোর্টে অস্বাভাবিক মৃত্যু নথিভুক্ত করা হয়েছিল ?
– আজ SSKM হাসপাতাল উল্লেখ করেছে যে গায়ক ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ এর কারণে মারা গেছেন যা সাধারণ মানে হার্ট অ্যাটাক তাহলে আঘাতের চিহ্ন তথ্য তার ব্যাখ্যা ?

এই মৃত্যু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেলো ক্ষমতা , উন্মাদনা মানুষকে অমানবিকতায় ঠেলে নিয়ে যায় যেখানে সামান্য সংবেদনশীলতা ও মনুষত্ব ধুলোয় লুন্ঠিত হয়ে আর সিটি অফ জয় তে প্রাণ যায় সদ্যহাস্য , সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র , এন্টারটেইনমেন্টের প্রাণ ভোমরা ‘কে কে’ এর মতো শিল্পীর । কারণ তিনি পারফর্মার , এন্টারটেইনার ও নিজের শ্রোতাদের প্রতি দায়বদ্ধ , তাইতো গরমে ঘেমে , শ্বাসকষ্ট সত্ত্বেও গেয়ে গেলেন গান – ”ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল , কলকাতাকে পল”

ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত বিশ্লেষণ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। কাল তার মরদেহ শায়িত থাকবে ভার্সোভার এক হলে তার অনুগামীদের জন্য যারা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন ১০.৩০ থেকে ১২.৩০ অব্দি তারপর পরিবার সূত্রে জানা গেছে তার অন্তিম যাত্রা ও পারলৌকিক ক্রিয়া করা হবে ভারসোভা হিন্দু সিমেট্রিতে

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *