‘মহালয়া’ আসলে পিতৃপক্ষ ও মাতৃপক্ষের সন্ধিস্থল
বাঙালির শ্রেষ্ঠ ধৰ্মীয় তথা সামাজিক উৎসব হলো, শারদীয়া উৎসব। এই উৎসবের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত ‘মহালয়া’ শব্দটি। সাধারণভাবে দেবি পক্ষের সূচনায় আমরা রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী গীতি-আলেখ্য শুনেই বুঝতে পারি জে আজ মহালয়া। আর এদিনটিই পিতৃপুরুষের তর্পণের জন্য নির্দিষ্ট। মহালয়া আমাদের পুরাণ, ধর্ম, কাব্য– সব কিছুতেই জড়িয়ে রয়েছে। এই সময়ে পিতৃলোকস্থিত পিতৃপুরুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মর্ত্য থেকে তাঁদের উদ্দেশ্যে জল দান করা হয়। এই পর্যন্ত ইতিহাসতে স্পষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন -‘মহালয়া’ কেন?
সহজ করে বলা যায়, এদিনটিতে সারাদিন অমাবস্যা, সারাদিন পিতৃপক্ষ। এই পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, অমাবস্যা পেরিয়ে পরের দিন আসে বহু প্রতীক্ষিত দেবীপক্ষ। এ এক মহালগ্নের প্রারম্ভ বলে মনে করা হয়। দেবীপক্ষে দেবীর আরাধনা হয়, পূজা হয়। স্বয়ং দেবীই তখন সাধারণের কাছে এক মহান অবলম্বন, এক মহান আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত হন। সেই মহান আশ্রয়ে এসে পৌঁছনোর বা সেই মহালগ্নে উত্তরণের সময়টির নাম তাই ‘মহালয়া’। আলয়’ মানে আবাস, আশ্রয়। একটি অর্থ অনুসারে এখানে আলয় তথা মহান আলয়টি হচ্ছে পিতৃলোক। অন্য মতে, তা নয়; মহান আলয় বলতে এখানে দেবীর আশ্রয় তথা দেবীর শরণ নেওয়ার বিষয়টিই বোঝানো হচ্ছে। আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যাকে তাকেই আমরা মহালয়া হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। দিনটি এক হিসেবে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন।