‘মহিলাদের রাত দখল’ নাড়া দিয়ে গেলো সমস্ত বাংলাকে
‘রিক্লেইম দ্য নাইট’ আন্দোলনে সারা বাংলায় ১৪ আগস্ট প্রাক স্বাধীনতা উৎসব হয়ে গেলো ‘মহিলাদের রাত দখল’ নামে প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে। একদম দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মহিলা রাস্তায় নামলেন। তাদের মুখে একটাই শ্লোগান – উই ওয়েন্ট জাস্টিস। এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন সাম্প্রতিক কালে বাংলা দেখে নি। মধ্যরাত ১২টা পার হতেই বহু জায়গার মিছিল থেকে দেশাত্মবোধক গান শোনা যায়। অনেকেই জাতীয় পতাকা কাঁধে যোগ দেন মিছিলে। যাদবপুর থেকে দিঘা, দিনাজপুর থেকে অ্যাকাডেমি চত্বর, প্রতিবাদের ভাষা এক। কোনও রাজনৈতিক রঙ না নিয়ে নাগরিক সমাজ ঐকব্যবদ্ধ হলে, মহিলারা একজোট হলে, কী ছবি উঠে আসতে পারে, তা দেখল ১৪ তারিখের রাত।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে গোটা বাংলা সহ গোটা দেশ শোকস্তব্ধ। ব্যস্ত শহরের রাতে, নিজের চেনা পরিসরে, নিজের কর্মস্থলে মহিলা চিকিৎসকের নৃশংস মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছে না বাংলা। এই মৃত্যু ঘিরে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে একজন।হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাকে খুনি বলে বক্তব্য রেখেছে। প্রশ্ন এখানেও যে তার বিচারের আগেই কী মুখ্যমন্ত্রী এই কথা বলতে পারেন? এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন শেষবার কবে দেখেছে বাংলা? এই ছবি দেখলে সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। মিছিলে মিছিলে স্বাধীনতার প্রাক মুহূর্তে বাংলা জুড়ে যেন রাস্তায় নেমেছেন শত শত ‘দুর্গা’রা। দিনে নয়, রাতে। যে রাতে মহিলাদের চলাফেরা নিয়ে থাকা বহু প্রশ্ন। এমনই শহরের এক রাতে আর জি কর-এর অন্দরে নৃশংস যৌন অত্যাচার, খুনের অভিযোগ রয়েছে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু ঘিরে।
সামনে দেবিপক্ষ। সেই দেবীরাই নেমেছে রাস্তায়। জন-প্লাবনে উদ্বেলিত কলকাতায় থেকে শুরু করে সমস্ত বাংলার প্রধান সড়কগুলো। কলকাতার অ্যাকাডেমি চত্বর থেকে রানীগঞ্জ, চুঁচুড়া থেকে কাটোয়া নেমেছে আজ আরজি কর-এ নির্যাতিতার অত্যাচারের বিরুদ্ধে। সৌরসেনী, চৈতি ঘোষাল, মৌসুমী ভৌমিক সহ একাধিক সেলেবদের দেখা গিয়েছে যাদবপুর এইট-বিতে। আরজি কর কাণ্ডে ‘দখল করো, দখল করো’র ডাক দিয়ে কার্যত অকাল দেবীপক্ষ কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু, মুম্বই, কানপুর সহ গোটা দেশে। এদিকে এই আন্দোলন নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত শাসক শ্রেণী। কুনাল ঘোষ একে নাটক বলে ব্যঙ্গ করলেও আন্দোলনে নেমেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ও। বুধবার রাত দখলের ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে সামিল হয়েছিলেন তিনি।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এই আন্দোলনের সূত্রপাত। মেয়েদের রাত দখলের এই ডাকে সাড়া দিয়েছে গোটা বাংলা। যে উদ্যোগের নেপথ্যে ছিলেন রিমঝিম সিংহ। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সাড়া দিয়ে ১৪ তারিখ রাত দখলে নেমেছেন মহিলারা। রিমঝিম বলেন,’আমাদের সকলের মধ্যেই ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই আমরা জড়ো হয়েছি। বিচার তো আমরা অবশ্যই চাইব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার।’ তিনি বলেন,’মূলে গিয়ে শোষণের প্রত্যেকটা কারণকে তুলে ধরা দরকার।’ তিনি মনে করেন এই নির্মম ঘটনার পিছনে আছে বড়ো কোনো সত্য, যা লোকানো হচ্ছে।
প্রতিবাদের ছবি সর্বত্র। কলকাতায় শাহরের বাইরে পানিহাটিতে কয়েক ঘন্টা ধরে চলে এই প্রতিবাদ অনুষ্ঠান। নদিয়ার নবদ্বীপ ব্লকের স্বরুপগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে এদিন মানুষ জমায়েত করে সরব হন আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে। এগরা শহরের দীঘা মোড় থেকে এক মোমবাতি মিছিল শুরু হয়ে এগরা শহর পরিক্রমা করে ফের দীঘা মোড়ে এসে শেষ হয়। দিনহাটা রাজপথ দখল করল মেয়েরা। আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে সরব চুঁচুড়া, চন্দননগর। এদিন সন্ধ্যায় চুঁচুড়ার ডিআই অফিস থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ মিছিল হয়। ঘড়ির কাঁটায় ১১.৫৫ মিনিট হতেই কলকাতা থেকে জেলা, ভিন রাজ্যের রাজপথে পা মেলাবেন মহিলারা। ডাক দিয়েছেন ‘মেয়েরা রাত দখল করো’।