ক্যাপ্টেন কোহলির দশ দফার কাহিনী…

SATYAM NEWS
দীপঙ্কর গুহ : বিরাট  ক্যাপ্টেন কোহলি পর্ব শেষ হল।  প্রথমে নিজে সরে ছিলেন টি টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে। এরপর তাঁকে সরানো হয় ওয়ান ডে থেকে। এবার তিনি নিজেকে সরিয়ে নিলেন টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি থেকে।
পরপর তিনটি নেতা পর্বকে  সাজিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম। একটা জিনিস নিশ্চিত : ক্যাপ্টেন কোহলি ইস্যুটি বিসিসিআই ঠিক করে সামলাতে পারলো না। নাকি আরো কোনও গভীর খেলা চলছে এই ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে!
শেষ থেকে শুরু করি। আমার ভাবনাগুলো পরপর লেখা যাক। তার অধিকাংশ প্রশ্ন। উত্তরও খোঁজার চেষ্টা করেছি, নানান পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে। আসছি সে সবে।
বিরাট কোহলির জন্য প্রশ্ন আছে।
১. দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ হারলেও , এখনও সিরিজের বাকি আছে। ওয়ান ডে সিরিজের তিনটি ম্যাচ বাকি। বিদেশের মাটিতে দল। এরপর দেশে ফিরে টেস্ট সিরিজের খেলা। তাহলে সিরিজের মাঝপথে এমন ঘোষণাটা কেন!
২. বিরাট, আপনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার কথা শুনিয়েছিলেন বিশ্বকাপ শুরুর আগেই। তখনই মনে হয়েছিল, অমন গুরুত্ত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের আগে কেন? কেন তারপরে জানানো কি যেত না?
৩. টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ চারে দলে পৌঁছতে পারেনি। মানে দল ব্যর্থ। এরজন্য দলের নেতার সরে দাঁড়ানোর ইস্যুটি কি কারণ?
৪. বিরাট, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আসার আগে প্রেস কনফারেন্স করে বলে এলেন যা যা , তাতে বোঝা গেল – ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন্সি ছাড়তে চাননি আপনি। কিন্তু বিসিসিআই নিজেদের পরিকল্পনায় আপনাকে চায় নি। আপনার কাছে অপমানজনক মনে হতে পারে। কিন্তু ব্যাক্তি কোহলি কি , দেশের কোহলির থেকে ইগো নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল?
৫. ভিকে – টেস্টে ক্যাপ্টেন্সি আপনি ছাড়তেই পারেন। নিশ্চয়ই, ভেবেই করেছেন। দেশের কথা ভেবেই করেছেন। এই দলের কোচ হয়ে যিনি আছেন, তিনিও একদিন হঠাৎ করে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েছিলেন। একদিন হঠাৎ করে, অবসর নেন। রাহুল দ্রাবিড় বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই, কোহলির কি কি মনের অবস্থা হয়ে আছে। এরপর তো আপনি দেশের হয়ে , সব ধরনের ক্রিকেট খেলবেন। টেস্ট তো আপনার অতি প্রিয়। আপনাকে সেই আগ্রাসী বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে মাঠে দেখা যাবে তো?
৬. গতকালের ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে আপনাকে বলতে শুনেছি, ‘নির্বাচকদের কাছে এসব জানতে চান- আমি বলতে পারি না’।  দলের  ক্যাপ্টেনের দল নির্বাচনে অনেক লড়াই করতে হয়। প্রাক্তন জাতীয় ক্যাপ্টেনরা পরে এই দল নির্বাচন নিয়ে কতো কিছু শোনান। আপনিও হয়তো বলবেন। আচ্ছা, এটা এমন নয়তো – পূজারা, রাহানেদের মত সিনিয়রদের নিয়ে আপনার লড়াই করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বুঝে এই দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন?
৭. গত দুই বছরে ক্রিকেটের বাতাবরণ কোভিডের জন্য বদলে গেছে । আবার সেই শারজায় ক্রিকেট শুরু হয়ে গেছে। ভারতীয় ক্রিকেটে অধিনায়ক চেয়ারটা অনেক কিছুর সঙ্গে কখনও লড়াই , আবার কখনও আপোস করে চলে। শাহ রাজত্বে তো অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে। বিরাট, আপনি এতে হতাশ হয়ে চেয়ার ছাড়লেন?
৮. পরিসংখ্যান বলছে, আপনি ৬৮ টি টেস্ট এই ৭ বছরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৪oটি টেস্ট জিতেছেন। এই সংখ্যা বিচারে আপনি দেশের সব সফল ক্যাপ্টেনের মাথায় বসে গেছেন। আপনার নেতৃত্বে দেখছিলাম , শামি সবচেয়ে সফল। বুমরাও। দলে থাকলেও, এই জুটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হলে কি করবেন? অশ্বিনকে প্রশংসায় ভাসালেন গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজে। খেলালেন। দারুণ কিছু কিন্তু করেননি অ্যাস। এটা কি চাপের কাছে নতিস্বীকার? এসব আর মেনে নিতে চাইলেন না!
৯. আপনি এই দলটার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখবেন আশাকরি আরও ৩-৪ বছর। অধিনায়ক হয়ে পারেননি, কিন্তু দলের প্লেয়ার হয়ে একটা আইসিসি ট্রফি আবার জিততে চাইবেন। একবার আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলে জিততে চাইবেন। আর নেতৃত্ব ছাড়ার পর, ম্যাচের সেরা হয়ে দলকে জেতানোর জন্য মাঠে নামতে চাইবেন। প্লিজ, ‘দিল চাহতা হ্যায়’ শিরোনাম সাজিয়ে — দেশের জন্য আবার জয়ের খোঁজে নেমে পড়ুন।
১০. আপনার নেতৃত্ব ছাড়ার পত্র টুইটারে পড়লাম। এখন বোধহয় এটাই স্টাইল। যা কিছু সব টুইটারে দাও। প্রমোশনাল ভিডিও ঢালো ইনস্ট্রাগামে, কোটি কোটি টাকা কামান। সেই পত্র বারবার পড়লাম। কোচ শাস্ত্রীর কথা আছে। তাঁর সাপোর্ট স্টাফদের কথা আছে। আছে ধোনি-র কথাও। আরও অনেক ভারতীয় নেতার এমন দায়িত্ব ছাড়ার প্রেস বিজ্ঞপ্তি মনে করার চেষ্টা করে দেখছিলাম। বিরাট, আপনার লেখায় লুকিয়ে আছে – এক ঝাঁক রহস্য। আপনি দেশের এই বিজয়ী বীর হয়ে থাকতে চান। তাই, আবেদন – দেশের ক্রিকেটের বায়ু দূষণে নিজের মুখে মাস্ক লাগিয়ে বাঁচার চেষ্টা আপনার না করাই ভালো। আপনার জন্যে তা মানানসই হবে না। বরঞ্চ, আত্ম জীবনী লেখাটা শুরু করে দিন। যাতে, প্রকাশের পর কিছু মুখ আর মুখোশ আলাদা করে চিনতে পারি।
এই পর্যন্ত থাক। বিরাট দশ দফার একটা হেস্ত নেস্ত হতে দেখি। তারপর বাকি কথা পরে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *