৩৭ তম বছরে স্টুডেন্টস হেলথ হোম নর্থ হুগলি
দিলীপ কুমার সোমের রিপোর্ট , হুগলী – স্টুডেন্টস হেলথ হোম নর্থ হুগলি আঞ্চলিক কেন্দ্রের ৩৬বছর পূর্ণ করে ৩৭ তম বছরে পদার্পণ উপলক্ষে ২০ এপ্রিল সকালে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির এবং বিকেলে নিজস্ব ভবনে প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করা হয় ছাত্র শিক্ষক শিক্ষিকা চিকিৎসক এবং শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
সকালে হেলথ হোম ভবনে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি ডা:বরুন নারায়ন শূর। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক মানস দাশগুপ্ত সহ শিক্ষক শিক্ষিকা কর্মীবৃন্দ সহ শুভানুধ্যায়ীরা। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সম্পাদক মানস দাশগুপ্ত এবং সভাপতি ডা: বরুন নারায়ন শূর। রক্তদান শিবিরে ১১৮জন রক্তদান করে শিবিরকে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যান। হেলথ হোমের পক্ষ থেকে রক্ত দাতাদের অভিনন্দন জানানো হয়।
বিকেলের অনুষ্ঠানের সূচনা করেন ছাত্রী দিশা গাঙ্গুলি। উপস্থিত ছাত্র ছাত্রী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সম্পাদক মানস দাশগুপ্ত। স্টুডেন্টস হেলথ হোমের প্রতিষ্ঠা কাল থেকে কোলকাতার মূল কেন্দ্রের পথচলার ইতিহাস সম্পর্কে ইতিবৃত্ত তুলে ধরার পাশাপাশি নর্থ হুগলি আঞ্চলিক কেন্দ্রের ১৯৮৬ সালের ২০এপ্রিল প্রতিষ্ঠার দিন থেকে আজ পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়ের ছাত্র ছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা,চিকিৎসা এবং চিকিৎসকদের ইতিবাচক ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। যে সমস্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রতিষ্ঠাকাল থেকে চিকিৎসা করেছেন তাঁদের মধ্যে যারা প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের
ভুমিকার কথা তুলে ধরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। বর্তমান সময়ে যারা আজও ধারাবাহিকভাবে পরিষেবা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চলেছেন সেই সমস্ত চিকিৎসকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান।
হেলথ হোমের সাথে যুক্ত শিক্ষক সুদীপ তরফদার হেলথ হোমের কর্মযজ্ঞের সাথে নিজেকে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে আমফান এবং কোভিড পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে গিয়ে সেখানকার অসহায় মানুষের পাশে বিভিন্ন সময়ে দাঁড়ানো এবং খাদ্যসামগ্রী, জামাকাপড়, ছাত্র ছাত্রীদের জন্য পড়াশোনার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ভূমিকার কথা তুলে ধরে হেলথ হোমের কর্মী, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসকরা যেমন আমফানের দুর্গত মানুষের স্বার্থে পাশে থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তার তুলে ধরেন। পাশাপাশি কোভিডে আক্রান্ত গরিব পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনা এমনকি নর্থ হুগলি আঞ্চলিক কেন্দ্রের সামনে দুস্থ অসহায় মানুষের পাশে থেকে রান্না করা খাবারও তাদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা সফল করেছেন হেলথ হোম। প্রতিটি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে সহযোগিতা পেয়েই এধরনের জনকল্যানমুখী মানবিক কাজ করার সাহস পেয়েছে স্টুডেন্টস হেলথ হোম। এই হেলথ হোমের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ সফল করতে পেরেছেন তা হলো ‘ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র ও অ্যাম্বুলেন্স’ পরিষেবার চালু করা যা সম্ভব হয়েছে অসংখ্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের এমনকিসাধারণ মানুষের সংহতি ও আর্থিক সহযোগিতায়।
আগামী দিনেও হেলথ হোমের কর্মযজ্ঞের পরিসর ছাত্র ছাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পাশে থাকার জন্য হেলথ হোমের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ারও প্রস্তাব রাখেন।
এদিনের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন স্টুডেন্টস হেলথ হোমের মৌলালির মূল কেন্দ্রের সাথে যুক্ত থাকা চিকিৎসক ডা: দেবাঞ্জলি রায়। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে হেলথ হোমের কর্মযজ্ঞের পরিসর ছাত্র ছাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন। নর্থ হুগলি আঞ্চলিক কেন্দ্রের সুন্দর পরিকাঠামো যা রয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করে চিকিৎসা পরিষেবা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এখানে চিকিৎসক এবং অন্যান্য পরিকাঠামো গত যেটুকু সুবিধা রয়েছে সেই ব্যবস্থাকে পুঁজি করেই আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আহ্বান জানান। প্রয়োজনে তিনি নিজেও সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন মানসী কুন্ডু, নৃত্য পরিবেশন করে ছাত্রী সৌমিতা দে। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে ‘প্রয়াস’ সংস্থার শিল্পীদের সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্টুডেন্টস হেলথ হোমের সদস্য ও শিক্ষাবিদ মঞ্জুলা মুখার্জি।