বাংলা? আনকাল্চারড আউর আনপাঢ় আদমিকা ভাষা হ‍্যায়। আংরেজি নেই আতা কম সে কম হিন্দি বলো।

SATYAM NEWS
“কলকাতায় এক অদ্ভুত কালচারের সৃষ্টি হচ্ছে। দোকানে, মলে, ডোমিনোসে, কেএফসি তে সব হিন্দি। হিন্দি তে কথা বলে , হিন্দি তে গায়, হিন্দিতেই ছাগল ও চরায়। এমনি দুর্দশা, বাংলার কিউট গালাগাল গুলোকেও বর্জন করছে যুব সমাজ। ব্যান্ডেল থেকে কলকাতা ,ওদিকে দুর্গাপুর ,আসানসোল সব এরকমই। পশ্চিমবঙ্গের বাকি যেটুকু পড়ে থাকে সেটা কে ওরা গ্রাম বলে আর আমাদের গেঁয়ো। বাংলা বলা টা যেন একটা সাব-স্ট্যান্ডার্ড জিনিস। কোথাও যেন আমরাই কোনো একটা কমপ্লেক্স এ ভুগি। যে ভাষা দেশে নোবেল আনলো, অস্কার আনলো, সে ভাষা বলতে এতো লজ্জা কেন ভাই!
না আমি বলছি না যে বাংলা পৃথিবীর সব থেকে মিষ্টি ভাষা। সব ভাষাই মিষ্টি সব ভাষাই রূঢ়। সব ভাষাতেই প্রেম করা যায়, সব ভাষাতেই ১০৮ করা যায়। নিজের মায়ের ভাষা বলতে তো এইসব কারণ লাগে না। আর ভীনদেশে গিয়েও বলছি না যে বাংলার জয় ডংকার বাজাও। বঙ্গ দেশে বাংলা বলো বাঙালি, ব্যস, এইটুকুই তো দাবি।
পৃথিবীর সব দেশেই নিজেদের ভাষার সংরক্ষণের একটা তৎপরতা আছে। অনেক দেশেই আছে সে দেশের লোকাল ভাষা না জানলে চাকরি নয়, ব্যবসা নয়। যদিও পার্সোনালি মাড়োয়াড়ি, বিহারী, ওড়িশিদের সাথে আমার প্রবলেম নেই। কিন্তু এই নিজের এলাকায় হিন্দি কপ্চাতে ভালো লাগে না। যারা ভাবছেন যে কলকাতা চিরকাল উন্মুক্তমনা, দুহাত দিয়ে আহ্বান করেছে ভিনভাষাভাষী মানুষদের, তাদের বলি উন্মুক্ত মন দিয়ে যাদের আহবান করছেন চেক করে নিন তাদের মনটাও উন্মুক্ত কিনা, শিখুক তারা বাংলা।
বাংলা ব্যান্ড আর নতুন কিছু বাংলা সিনেমার গান,বাংলার থিয়েটার অনেকটাই জুড়ে আছে এই আন্দোলনের সাথে। কিন্তু কি ফায়দা এতকিছুর পর আপনি যদি দাদা কে ভাইয়া, জামাইবাবু কে জিজু আর ফুচকা কে গোলগাপ্পা বলেন।
কয়েক বছর আগে মা বাবা কে সিটি সেন্টার ২ এ নিয়ে গিয়েছিলাম। ওরাতো ভয়েই শুকিয়ে গিয়েছিলো এতো ইংরেজি আর হিন্দির দৌরাত্বে। ফুড কাউন্টারের লোকগুলোও মহা জানোয়ার, বুকে স্পষ্ট লেখা আছে অমিত গুছাইত ,সকাল বেলা চপ মুড়ি গিলে বলে কি না “What would you like to order, Sir?” “স্যার আপ ক্যা লেঙ্গে?” কয়েকমাস আগে ডানলপের ওখানে যে ডোমিনোস আছে ওখানে গিয়েছিলাম। জায়গা টা পাঞ্জাবি অধ্যুষিত জায়গা। অবাঙালি একটু বেশিই দেখবেন ওখানে। অর্ডার লাইনে একের পর এক ইংলিশে হিন্দিতে অর্ডার দিচ্ছে চুলে জেল মারা, ব্র্যান্ডেড জুতো পরা,জিম করা ছেলে গুলো। টুকরো একটা দিল্লি যেন। ছিল হয়তো ওই দলে বাঙালিও ,কিন্তু বাংলা বলে নি তারা।
কলকাতায় ভাগাড়ের মাংস নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন হন। ভালোই করছেন। কিন্তু নিজের অজান্তে বিড়াল খেয়েছেন বলে মিঁউ মিঁউ করে থাকতে কে বলেছে! পরেরবার কলকাতায় যদি কোথাও খেতে যান , কিংবা ঘুরতে যান বা অনলাইন অর্ডার দেন বাংলায় বলবেন।
আর হ্যাঁ, আমাদের হিন্দি উচ্চারণের কাহন তো সর্বজনবিদিত। ভাই, আমাদের ‘অ’ আর হিন্দির ‘অ’ এর উচ্চারণটই আলাদা। বেসিক টাই আলাদা। তাই আমাদের একটা আক্সেন্ট থাকা স্বাভাবিক। আর এটা নিয়ে ভালো হিন্দি বলতে পারা বাঙালিদের মাথা ব্যাথার শেষ নেই।
এই ভাষার অনেক ইতিহাস ,আকাশে মাথা উঁচিয়ে থাকার মতো ইতিহাস ,অনেক রক্তাক্ত ইতিহাস।
বাংলাতে বাংলা বলুন।
সর্বশেষে হে বাঙালি , “জানা গানা মানা ইয়াধি নায়াক জায়া হে” দয়া করে এইভাবে গাইবেন না ,অবাঙালিরা গাক, প্রবলেম নেই , “জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে” এইভাবেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *