কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র ভেঙ্গে দেওয়ার পথে রাজ্য সরকার, প্রতিবাদে MSC, AIDSO (মেডিকেল ইউনিট)
সঞ্জয় মন্ডল, কলকাতা :- পশ্চিমবঙ্গের মানুষের চোখের কোন বড় রোগ হলেই ভাবতে হয় ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার কথা।কিন্তু সাধারন মানুষ যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের পক্ষে রাজ্যের বাইরে তো দূরের কথা জেলা থেকে কলকাতায় এসে চিকিত্সা করানো টাই কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও তাদের মধ্যেই যারা কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী চক্ষু চিকিত্সা প্রতিষ্ঠান ” রিজিওনাল ইন্সটিটিউট অব অফ্থালমোলজি , ছোট করে RIO তে এসে পড়েন তারা বিনা পয়সায় অতি উন্নত মানের চিকিত্সা পেয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ।কিন্তু আর কতো দিন পর্যন্ত পাবেন তা নিয়ে একটা চিন্তা রয়েই যায়।রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এই চোখের চিকিত্সা কেন্দ্র ভেঙ্গে ট্রমা কেয়ার বিল্ডিং গড়ে তোলা হবে।সরকারে এই তুঘলকি আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ছে MSC এবং AIDSO(মেডিকেল ইউনিট)। MSC রাজ্য সম্পাদক ডাক্তার অংশুমান মিত্র বলেন, ” রিজিয়নাল ইন্সটিটিউট অফ অফ্থালমোলজি (RIO) ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে ট্রমা কেয়ার বিল্ডিং তৈরি করা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের এই অবিমৃষ্যকারী সিদ্ধান্তকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। সিদ্ধান্ত একাধারে অপরিকল্পিত এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী।
“প্রথমতঃ, এই প্রতিষ্ঠানটি একটি হেরিটেজ প্রতিষ্ঠান, যেটি এশিয়া তথা ভারতবর্ষে চক্ষু বিজ্ঞান চিকিৎসা ও শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করে। ঐতিহাসিক কারণেই এই প্রতিষ্ঠান এবং তার ভবনকে সংরক্ষণ করে পরিষেবাকে সর্বাধুনিক স্তরে নিয়ে যাওয়া দরকার।
“দ্বিতীয়তঃ, রোগীদের পরিষেবা দেওয়াটাই যদি শাসক দলের কর্তাব্যক্তিদের মুখ্য উদ্দেশ্য হত, তবে একটি চালু প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসা পায়, বিভিন্ন প্রান্তের জটিল চক্ষু রোগের চিকিৎসা জন্য মানুষ ছুটে আসে, এবং প্রতিদিন সাফল্যের সাথে শতাধিক অপারেশন হয়, তাকে একটি নতুন প্রকল্প রুপায়ণ করার নামে ভেঙ্গে ফেলা বা সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা তারা করত না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বিভাগটির যা চাহিদা, নিয়মিত যে সংখ্যক মানুষকে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হয়, তাতে খোদ RIO আরও সম্প্রসারণ এবং উৎকর্ষতা দাবি রাখে। কর্তৃপক্ষ যদি এখানে আরও সম্প্রসারিত ব্যবস্থাপনা করার পর এই ট্রমা কেয়ারের পরিকল্পনা করত, সেটা তবুও বিশ্বাসযোগ্য হত।
“বিপরীতে, যখন স্বাস্থ্যসাথীর মোড়কে রাজ্যের পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিমা নির্ভর করার চেষ্টা হচ্ছে, সেই সময়ে RIO র মত প্রতিষ্ঠান সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে।
“তৃতীয়তঃ, রাজ্যে ট্রমার চিকিৎসা দেওয়া সত্যই যদি সরকারের উদ্দেশ্য হত, তাহলে SSKM, RG Kar এর মত ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া সেন্টারগুলির চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীর অভাবে ধুঁকতে থাকা পরিষেবা উন্নত করার চেষ্টা করত, এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জেলার মেডিকেল কলেজগুলিতে ট্রমা কেয়ার পরিষেবা গড়ে তোলার ব্যাপারে মন দিত। উপরন্তু, ভাল পরিষেবা দেওয়ার সদিচ্ছা থাকলে ট্রমা কেয়ার প্রতিষ্টানগুলি মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের উপর নির্ভরশীল না রেখে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসাবে গড়ে তোলায় উদ্যোগ নিত।
“সর্বোপরি, একটি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা ট্রমা কেয়ার বিল্ডিং মেডিকেল কলেজের ভেতরেই হতে হবে তার বাধ্যবাধকতা নেই। কলেজ ক্যাম্পাসের সীমিত জায়গার বাইরে এনেক্স হিসাবে অন্যত্র প্রশস্ত জায়গা নিয়ে ক্যাম্পাস গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিন সরকার ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং সরকার সত্যই চাইলে অন্যত্র এই নতুন চিকিৎসা পরিষেবার বন্দোবস্ত করতে পারে। কিন্তু অফ্থালমোলজির মত একটি বেসিক বিভাগ এম.বি.বি.এস শিক্ষার প্রয়োজনেই কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে পারে না। দক্ষিণ কলকাতার ব্যস্ত রাস্তা হাজরা মোড়ে অবস্থিত চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন নতুন পরিষেবা এনেক্স ক্যাম্পাসে নতুন করে বানানোর মত উদাহরণ মেডিকেল শিক্ষা ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান উদাহরণ প্রচুর আছে।
“সাম্প্রতিককালে উত্তর কলকাতায় অবস্থিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান NIOH/ NILD-কে অকার্যকর করে জাতীয় প্রতিষ্ঠান স্তর থেকে অবনত করে আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার কেন্দ্রীয় সরকারের যে নোংরা রাজনীতি তা রোগী-কর্মচারী-জনসাধারণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে আরো উন্নততর ভাবে জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবেই চালাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে জনগণ বাধ্য করছেন। RIO নিয়ে রাজ্যের কর্তা-ব্যক্তিদের পরিকল্পনাও সেরকম আরেকটি দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ বলে আশংকা হয়।
“তাই আমরা রাজ্য সরকার এবং মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করছি, অবিলম্বে দেশের গরীব মানুষের চোখের চিকিৎসার ভরসাস্থল RIO সরিয়ে সেই জায়গাতে ট্রমা কেয়ার তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। RIO-র আরও সম্প্রসারণ ও উৎকর্ষসাধন করতে হবে। RIO-র উপর কোন হস্তক্ষেপ না করেই স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্রমা কেয়ার তৈরি করতে হবে এবং জেলায় জেলায় ট্রমা কেয়ার পরিষেবা গড়ে তুলতে হবে।