ব্রহ্মাণ্ডের আছে নিজস্ব নেপথ্য সঙ্গীত
আপাত দৃষ্টিতে কথাটা অস্বাভাবিক মনে হলেও বহু বছর আগে আসিনস্টাইন এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন,কিন্তু প্রমাণ দিতে পারেন নি। এক বিশ্বের তাবর বিজ্ঞানীরা সমবেত হয়ে সেই কথাই বললেন। ব্রহ্মাণ্ডের গুনগুন গান! মহাবিশ্বের অন্তর্জাল ভেদ করে প্রায় আলোর গতিতে দিগ্বিদিক ছুটে চলেছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিস্রোত। আর তার জেরে তৈরি হচ্ছে মৃদু শব্দতরঙ্গ। অন্তত একশো বছর আগে মহাবিশ্বের এই ‘নেপথ্য সঙ্গীত’ অনুধাবন করেছিলেন বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। যদিও কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। অবশেষে সেই শব্দতত্ত্বের প্রমাণ খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একত্রে ঘোষণা করলেন সে খবর।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শতাধিক বিজ্ঞানী। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, চিন, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার রেডিয়ো টেলিস্কোপের সাহায্যে প্রমাণ মিলেছে। বহু বছরের চেষ্টায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি নতুন দরজা খুলে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। এই শব্দ তরঙ্গ আসলে এক ধরনের সঙ্গীতের ধ্বনি। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না বিজ্ঞানীরা। ওই বছর দু’টি কৃষ্ণগহ্বরের মুখোমুখি সংঘর্ষের জেরে তৈরি মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গস্রোত চিহ্নিত হয় আমেরিকা ও ইটালির পর্যবেক্ষণাগারে। এই ধরনের ভয়াবহ মহাজাগতিক ঘটনার জেরে দীর্ঘ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ তৈরি হয়। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্র কম্পাঙ্কের মাধ্যাকর্ষণ স্রোত খুঁজছিলেন।
গবেষকেরা বলছেন, মাধ্যাকর্ষণ স্রোত যখন কোনও কিছুর মধ্যে দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যায়, স্থানটি সূক্ষ্ম ভাবে সঙ্কুচিত-প্রসারিত হয়। কোনও ক্ষুদ্র কম্পাঙ্কের মাধ্যাকর্ষণ স্রোতের এই সঙ্কোচন-প্রসারণের প্রমাণ খুঁজতে শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সে জন্য তাঁরা মৃত তারাদের কেন্দ্রীয় মণ্ডলে (পালসার) নজর দেন। দেখতে পান, একটি নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে রেডিয়ো তরঙ্গের ঝলক। কিথ বলেন, ‘‘একেবারে ঘড়ির মতো কাজ করে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ঝলক।’’ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত রেডিয়ো টেলিস্কোপগুলি মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির মোট ১১৫টি পালসারে দৃষ্টিনিক্ষেপ করেছিল। এ ভাবেই দীর্ঘ পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞানীরা মাধ্যাকর্ষণ শক্তিস্রোত ও তার নেপথ্য ‘সঙ্গীত’-এর সন্ধান পান। বিজ্ঞানী কিথ বলেন, ‘‘কৃষ্ণগহ্বরগুলির ভিতরে যে গুনগুন শব্দ ভেসে বেড়ায়, তা অনেকটা ভিড়ে ঠাসা রেস্তরাঁয় বসে থাকার মতো। লোকজন কথা বলছেন আর তাতে মৃদু ও অস্পষ্ট গুঞ্জন তৈরি হচ্ছে।’’
মহাকাশ গবেষণার নতুন পথ খুলে দিল এই আবিষ্কারের ফলে।