নুমাইশ ২০২৪: প্রতিবাদের এক নতুন ভাষা
কলকাতা, ১৪-১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ – যেখানে গোটা শহর এবং রাজ্য জুড়ে মিছিল, সভা এবং অবরোধের ভাষায় প্রতিবাদ চলছে, দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি সংস্থা তুলে নিয়েছে এক নতুন প্রতিবাদ এর মাধ্যমে। হেলপিং হ্যান্ড (Helping Hand) নামক এই সংস্থা তাদের বার্ষিকী শিল্প প্রদর্শনী ‘নুমাইশ’ এর মাধ্যমে সাম্প্রতিক অভয়া কান্ডের এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে।
১৪ ও ১৫ই সেপ্টেম্বরের এই দু দিন ব্যাপী প্রদর্শনীর মূল থিম ‘No Means No’ – যা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে হেল্পিং হ্যান্ড এর বক্তব্য। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আর জি কর মেডিকেল হাসপাতাল এর তিন জুনিয়র ডাক্তার, যারা ৯ আগস্টের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেন এবং গত ৩৫ দিন ধরে তারা যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তা তুলে ধরেন। তাদের ভাষণে, তারা সকল অংশগ্রহণকারীদের ন্যায়ের লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বহু মাননীয় অতিথি, যেমন এশিয়ান যোগ চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী শ্রীমতি সুস্মিতা দেবনাথ এবং তারাসুন্দারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতি মোনালিসা মাইতি। সঙ্গে ছিলেন Opportunity Cafeর সিনিয়র ম্যানেজার শ্রী দীপঙ্কর অধিকারী ও Mother’s Army থেকে ডাক্তার প্রীতি দাস।
“প্রত্যেকেই নিজদের নিজেদের মত করে প্রতিবাদ করছেন। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমার কাছে আমার খেলা টাই সব, তেই আমি নিজের স্বর্ণ পদকটি তুলে দিয়েছি তিলোত্তমার মা-বাবার হাতে”, বলেছেন সুস্মিতা দেবনাথ।
“মানুষ গড়ে ওঠার কাজ টা আমাদের সবার দায়িত্ব। Value Education টা এখন সব থেকে দরকার হয়ে উঠেছে। আমার ভালো লেগেছে যে হেলপিং হ্যান্ড বাকি ngo দের নিয়ে যে ভাবে এগিয়ে চলেছে টা সত্যি অসাধারণ এক প্রচেষ্টা। মানুষ গড়ার এই প্রচেষ্টা কে আমি সাধুবাদ জানাই। আমরা যেন এই প্রতিবাদ না ভুলি”, বলেছেন মোনালিসা মাইতি।
দ্বিতীয় দিন আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেতা জয় ব্যানার্জি, যিনি একজন জনপ্রিয় দৈনিক সিরিয়ালের অভিনেতা এবং বাংলা টেলিভিশনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পরিচিত। তিনি বিভিন্ন বাংলা ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন, যা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। “এই উদ্যোগ আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে, এবং আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি প্রতি বছর আসব এবং আপনাদের সবসময় সমর্থন করব,”
আমাদের সঙ্গে ছিলেন ICMR-NICED কলকাতার উপ-পরিচালক ডঃ সুমন কানুনগো, যিনি টাইফয়েড, রোটা এবং কলেরা সহ অন্ত্রের রোগ নিয়ে তার গবেষণার জন্য পরিচিত এবং জনস্বাস্থ্যে তার অবদানের জন্য প্রসিদ্ধ। “আমি হেল্পিং হ্যান্ডের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। যদি আমাদের দেশের যুবসমাজ তাদের কাজে সত্যিই বিশ্বাস রাখে, তবে সমাজে পরিবর্তন অনিবার্য,” বলেন ডঃ কানুনগো।
অভিনেত্রী অনুরাধা মুখার্জি, যিনি বহু প্রশংসিত সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং ছোট ছবির মুখ, উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই প্রতিবাদকে সমর্থন করার জন্য মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। “এই ঘটনার প্রতিবাদ আমাদের সকলের করা উচিত, এবং আমাদের যে কোনোভাবে প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। হেল্পিং হ্যান্ড এর এই পজিটিভ উদ্যোগ কে আমি কুর্নিশ জানাই এবং আমি এখানে আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে” বলেন মিস অনুরাধা মুখার্জি।
নুমাইশ ২০২৪ এর একটি উল্লেখযোগ্য জিনিস হল, এই প্রদর্শনীর প্রতি টা স্টলে মহিলা প্রতিনিধি ছিল, হয় মালিক, নয় সহকর্মী বা সহায়ক হিসেবে। স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনী থেকে সংগৃহীত অর্থ দাতব্য কাজে ব্যবহার করা হবে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, হেল্পিং হ্যান্ড একটি সমষ্টিগত কণ্ঠকে জোরালোভাবে তুলে ধরে কর্ম ও পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে।
আমরা সকলকে ধন্যবাদ জানাই এই অনুষ্ঠান কে সফল করার জন্য। একসঙ্গে, আমরা একাত্মতায় দাঁড়িয়ে আছি এবং সমাজে ‘না মানে না’ বার্তাটি জোরালোভাবে প্রতিধ্বনিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
হেল্পিং হ্যান্ড কলকাতা সম্পর্কে:
হেল্পিং হ্যান্ড কলকাতা একটি অলাভজনক সংস্থা, যা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান এবং সমাজে অর্থবহ পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করে। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার মূল লক্ষ্য হল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ক্ষমতায়ন করা। হেল্পিং হ্যান্ড বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে সচেতনতা প্রচারণা, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি এবং জনসচেতনতামূলক ইভেন্ট, যেমন নুমাইশ।
এই সংস্থা লিঙ্গ সমতা প্রচার করে, নারীদের অধিকার সমর্থন করে এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে মতবিনিময় এবং পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নিরাপদ স্থান তৈরি করে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, পেশাদার ও অন্যান্য সামাজিক সংস্থাগুলির সাথে সহযোগিতা করে, হেল্পিং হ্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি, কর্মপ্রেরণা জাগানো এবং কলকাতা ও তার বাইরেও স্থায়ী সামাজিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করছে।
হেল্পিং হ্যান্ড শিক্ষার মাধ্যমে সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়িত করার লক্ষ্যে কাজ করে, সম্মান ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করে, এবং সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকারদের সক্রিয়ভাবে সহায়তা করে। তাদের চলমান প্রকল্পগুলির মাধ্যমে, তারা সমাজের সকল স্তরে সহানুভূতি, সংহতি ও অন্তর্ভুক্তির মূল্যবোধ প্রচার করতে সচেষ্ট। বর্তমানে, তারা সুন্দরবন, শান্তিনিকেতন, কন্নগর এবং কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করছে।