মহাভারতে হারিয়ে যাওয়া বিকর্ন কাহিনী

SATYAM NEWS
বিকর্ন হলেন দুর্যোধনের তৃতীয় ও একমাত্র ধার্মিক ভাই। যখনই দুর্যোধন অধর্মের পথে গেছে, তখনই বিকর্ন তার প্রতিবাদ করেছে। দুর্যোধনের কাছে পাশা খেলায় যুধিষ্ঠির তাঁর রাজ্য সহ সব কিছু হারিয়ে ফেলেন৷ বিকর্ণই একমাত্র কৌরব যিনি রাজসভায় দুর্যোধন যখন যুধিষ্ঠির তথা পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদীর অপমান করছিল তখন তার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন৷ বিকর্ণ হলেন দ্রোণের একজন শিষ্য যিনি তীর-ধনুক চালনায় অর্জুনের মতো পারদর্শী ছিলেন। অস্ত্রশিক্ষা শেষে দ্রোণ কৌরবদের বললেন- গুরুদক্ষিণা হিসেবে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদকে বন্দী করে নিয়ে আসতে হবে৷ দুর্যোধন, দুঃশাসন, যুযুৎসু, বিকর্ণ এবং অন্য কৌরবগণ হস্তিনাপুরের সৈন্যসহ পাঞ্চাল রাজ্য আক্রমণ করে৷ কিন্তু পরাজিত হয়।
ব্যাসদেব বিকর্নকে ধার্মিক হিসাবে তৈরী করলেও তাঁকে কিন্তু অন্তরালে রাখে দিয়েছেন। দুর্যোধনের ভাই হলেও তিনি, তাঁর বাকি ভাইদের মত বদমেজাজি ও অহংকারী ছিলেন না৷ পান্ডবদের পাশাখেলায় পরাজয় হেতু সভামধ্যে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময়ে ধৃতরাষ্ট্র আর এক বৈশ্য দাশীর পুত্র যুযুৎসু ব্যতীত একমাত্র প্রতিবাদ করেছিলেন তিনিই৷ এর প্রতিবাদে এমনকি তিনি সেই সভাস্থল ত্যাগ করেন৷ পরবর্তীতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও তিনি কৌরব পক্ষের হয়ে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন৷
ভীম কৌরবদের একশ ভাইকে বধ করবার পণ নিয়ে যখন কুরুক্ষেত্রকে প্রায় শ্মশানে পরিণত করেছেন তখন বিকর্ণ তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে দ্বন্দ্বের আহ্বান জানান। ভীম কিছুকাল ভাবেন, তারপর সেই সভার কথা মনে হতে তিনি বিকর্ণকে বলেন তুমি একমাত্র কৌরব যে জানে ধর্ম কি? তুমি সরে দাঁড়াও আমি তোমাকে বধ করতে চাই না৷ তুমিই একমাত্র যে সেই সভায় দুর্যোধনের প্রতিবাদ করেছিলে৷ এখানেই বিকর্ন আবার নিজের যুদ্ধ ধর্মে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, আজ আমার সরে যাওয়াটাও অধর্ম হবে, আমি জানি কৌরবদের এই যুদ্ধে জয়লাভ কোনোদিনই হবে না। যেহেতু বাসুদেব কৃষ্ণ পান্ডব পক্ষে আছে, কিন্তু আমি আমার ভাই এবং জ্যেষ্ঠ ভাই দুর্যোধনকে পরিত্যাগ করতে পারব না৷ আমি ধার্মিক কিন্তু বিভীষণ নই৷ আমাকে যুদ্ধ করতেই হবে৷ তিনি বলেন “সেই সভাস্থলে আমার যা কর্তব্য ছিল করেছি, কিন্তু এখন আমার কর্তব্য আমার ভাইদের রক্ষা করা৷ তাই এসো আমার সাথে দ্বন্দ্ব কর বৃকোদর ভীম৷” শেষ পর্যন্ত ভীমের হাতেই তার মৃত্যু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *