জন্মাষ্টমী : কিংবদন্তি ও ধৰ্মীয় আচার – একটি প্রতিবেদন
আজ সোমবার, ২৬ আগস্ট ভাদ্র অষ্টমী তিথি। সেই তিথিতেই এ বছর পালিত হচ্ছে জন্মাষ্টমীর উৎসব। সাধারণভাবে আমরা জানি এই তিথিতেই মহাভারতে কৃষ্ণের জন্ম। ভক্তপ্রাণ হিন্দুদের কাছে এই দিনটি খুবই পবিত্র। বিশেষ করে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষেরা খুব ঘটা করে পালন করেন এই উৎসব। পুরাণ অনুসারে পাঁচ হাজার বছর আগে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন শ্রীবিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণ। তাঁর আবির্ভাব তিথি প্রতি বছর জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ছাড়াও এই দিনটি গোকুলাষ্টমী নামেও পরিচিত।
মহাভারত অনুসারে মথুরায় কংসের কারাগারে জন্ম হয় দেবকী ও বসুদেবের অষ্টম গর্ভের সন্তান কৃষ্ণের। কংসের হাত থেকে তাঁকে রক্ষা করতে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির রাতে যমুনা পেরিয়ে বৃন্দাবনে যশোদা ও নন্দের সংসারে কৃষ্ণকে রেখে আসেন বসুদেব। স্বয়ং বিষ্ণু কারাগৃহে উপস্থিত হয়ে দেবকী ও বসুদেবকে দর্শন দেন এবং তাঁদের পূর্বজন্মের তপস্যা সম্পর্কে জানান। তার পুণ্যফলের জন্যই দেবকী ও বসুদেবের কাছে তিন বার অবতার নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তৃতীয় জন্মে দেবকীর পুত্র কৃষ্ণ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে তাঁর প্রতিশ্রুতি পুরো করেন বিষ্ণু।
ভারতীয় পুরান হলো হিন্দু ধর্মের মূল আকারগ্রন্থ। এর মধ্যে আছে হাজার হাজার বছরের আর্য তথা হিন্দু ধর্মের নানা কথা ও উপকথা। গোটা বিশ্বজুড়েই কৃষ্ণভক্তরা এই দিনটি সাড়ম্বরে পালন করেন। পুরাণ অনুসারে বিষ্ণুর মানব অবতারের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ছিলেন কৃ্ষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের জীবনকথা নিয়ে বহু কাহিনি, উপ-কাহিনি, লোককথা প্রচলিত আছে। জন্মের পর থেকেই কৃষ্ণকে ভগবান হিসেবে পুজো করা শুরু হয়ে যায়। এইদিন শিশু কৃষ্ণের আরাধনা করেন সারা বিশ্বের মানুষ। ভগবদ গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন, ‘যখনই অসত্য ও পাপে এই পৃথিবী ভরে যাবে, তখনই ধর্ম রক্ষা করতে ও সত্য প্রতিষ্ঠা করতে আমি এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হব।’ জন্মষ্টমী হল অশুভকে বিনাশ করে শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার উত্সব।
ভারতীয় পুরান বলে, তালের বড়া ও তালের ক্ষীর,মাখন, মিছরি, ক্ষীর,মালপোয়া সহ ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মোহন ভোগ, বাসন্তি পোলাউ, নারকেলের নাড়ু,লুচি, সুজি,অন্যান্য মিষ্টি ইত্যাদি।
ভক্তকুল এদিন কৃষ্ণের স্মরণে আত্ম সমর্পন করে সারাদিন কৃষ্ণের নাম-গান করে থাকেন।